চাঁদপুর জেলাধীন মতলব উত্তর উপজেলার ১২নং ফরাজীকান্দি ইউনিয়নের শায়খ বোরহানুদ্দীন (রহ)এর পরিবারে ১৯৪২ সালের ২৮শে ডিসেম্বর কলকাতায় জন্মগ্রহন করেন শায়খ মানযূর আহমাদ (রহ)।
পঞ্চাশের মনন্তর কালে তিনি শৈশবের দিনগুলো অতিবাহিত করেন। পিতা শায়খ বোরহানুদ্দীন (রহ) ছিলেন একজন কামেল ও মুকাম্মেল পীর। তিনি ফুরফুরা সিলসিলাভুক্ত পীর প্রফেসর আব্দুল খালেক (রহ) এর কাছ থেকে কাদেরিয়া, চিশতিয়া, নকশবন্দিয়া, মোজাদ্দেদিয়া ও ত্বরীকায় খেলাফত লাভ করেন।স্বভাবতই শায়খ মানযূর আহমাদ ইলমে তাসাউফের পরিবেশে বেড়ে উঠেন। তার পিতার খানকাতে মুরিদগনের মধ্যে তালিম-তালকীন বিতরনের অভিজ্ঞতা তিনি কৈশরেই অর্জন করেন।
আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের একনিষ্ঠ অনুসারী তিনি তখন থেকেই হয়ে উঠেন। ছাত্রজীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী। প্রতিটি পরীক্ষায় তিনি ভালো ফলাফল করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতেন। ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়ন শেষে শায়খ মানযূর আহমাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিজে মাষ্টার্স ও আইনে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নাকশবন্দ ও নাকশবন্দি ত্বরীকা শীর্ষক গবেষক ছিলেন। তিনি ইলমে মারফতের সমস্ত স্তর অতিক্রম করে কামালিয়াত হাসিল করেন। পিতার কাছ থেকে কাদেরিয়া, চিশতিয়া, নকশবন্দিয়া, মোজাদ্দেদিয়া, উয়েসিয়া, সোহরাওয়ার্দিয়া, আহমাদীয়া ত্বরীকাগুলো ছাড়াও শাযুলিয়া, জাযুলিয়া, সাম্মানিয়া, তিজানিয়া, উসমানিয়া ও রিফাইয়া ত্বরীকার সনদ লাভ করেন। রিফাই ত্বরীকার বিশিষ্ট শায়খ, কুয়েতের সাবেক মন্ত্রী এবং বিশিষ্ট দানবীর হযরত ইউসুফ হাশেম রিফায়ী (রহ) দাস্তে তিনি বায়াত হয়ে ফেলাফত প্রাপ্ত হয়েছিলেন বলে জানা যায়। দানবীর হযরত রেফায়ী (রহ) শায়খ মানযূর আহমাদের প্রতিষ্ঠান নেদায়ে ইসলামের কর্মকান্ডে মুগ্ধ হয়ে এই সেবা সংস্থা কতৃক পরিচালিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রচুর আর্থিক অনুদান দিয়েছেন।
ফুরফুরা শরীফের বড় হুজুর ক্বিবলা কাইয়ূমে জামান হযরত মাওলানা শাহ সূফি আবু নগর মুহাম্মদ আবদুল হাই সিদ্দিকী (রহ) কলকাতা থেকে নেদায়ে ইসলাম নামে একটি মাসিক পত্রিকা বের করেন। এই নেদায়ে ইসলাম নামের মাহাত্ম্যের প্রভাব দেখা যায় শায়খ মানযূর আহমাদের পিতা শায়খ বোরহানুদ্দীন (রহ) কতৃক প্রতিষ্ঠিত সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান নেদায়ে ইসলামের নামকরণে। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে ৯-ই মে শায়খ বোরহানুদ্দীন (রহ) ইন্তেকাল করেন। শায়খ মানযূর আহমাদ নেদায়ে ইসলামের চেয়ারম্যান হিসাবে এবং পিতার সাজ্জাদানসীন পীর সাহেব হিসেবে দ্বায়িত্ব গ্রহন করেন।
নেদায়ে ইসলামের দায়িত্ব গ্রহবের পরপরই তিনি পিতার নামানুসারে ঢাকায় নাজিমুদ্দিন রোডে ঢাকা মহানগরীর প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া নেদায়ে ইসলামের আওতায় গড়ে উঠেছে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ইয়াতিমখানা, হিফযখানা, মসজিদ, যুব প্রশিক্ষন কেন্দ্র, মহিলা মাদ্রাসা, পাঠাগার, বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র, কিন্ডারগার্ডেন স্কুল, চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র প্রভৃতি। শায়খ মানযূর আহমাদ (রহ) স্বরচিত স্বাসীদাগুলোতে রসূল প্রেমের এমন স্ফূরণ ঘটেছে যা রসূলপ্রেমিকদের অন্তরে প্রেমের জোয়ার ও স্পন্দন এনে দেয়। তিনি চাইতেন যেন তার কবর মাদীনা মুনাওয়ারায় জান্নাতুল বাক্বীতে হয়। বাস্তবেও তাই ঘটলো, ২০১২ সালে তিনি হজ্ব করতে যান এবং পহেলা অক্টোবর মাদীনা মুনাওয়ারায় ইন্তেকাল করেন। শায়খ মানযূর আহমাদ (রহ) কে জান্নাতুল বাক্বীতে তার ইচ্ছানুযায়ী তাকে কবরস্থ করা হয়। তিনি লিখে গেলেন…….
#তোমার চরণে আমার মরন কিগো না।
#মানযূরেরই এই ভাসনা হৃদয়েতে সদা রাখনা
জনম জনম রইগো যেন হাবীব প্রেমে দিওয়ানা।
#জান্নাতুল বাকীতেই সুধু মোর ঠিকানা।
#না পেলে তোমার চরন জান্নাতুল বাকীতে মরন
না হলে জীবন যাবে বৃথায়।
এমন অসংখ্য কাস্বীদা শরীফের মাধ্যমে তিনি বলে গেছেন আমার সমাধি মাদীনাতে জান্নাতুল বাকীতেই হবে।
যিনি ছিলেন স্বানী উয়েসূল কারনী।
সারা জীবন নাবীর জন্য কেঁদে গেছেন,,,
রবীউল আউয়াল মাস আসলে খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠতেন তিনি,,,,
অসংখ্য কাস্বীদা শরীফ লিখেছেন নাবীর আগমন নিয়ে।
#তিনি যদিও ফুরফুরা সিলসিলার ছিলেন কিন্তু ভালবাসতেন সকল সুন্নী সিলসিলাকে
♥আলা হযরতের লিখা বিখ্যাত তাফসির কানযূল ঈমানের মধ্যে রয়েছে উনার সাক্ষর।
রেজভী হুজুরকেও অনেক ভালবাসতেন তিনি
একসাথে অনেক মাহফিল করতেন,
রেজভীয়া দরবারে গিয়ে কাস্বীদা শরীফ গাইতেন।
যারা নাবীকে ভালবাসতেন তাদেরকেই তিনি ভালবাসতেন।
ইসলামী ছাত্রসেনাকে নিয়েও কাস্বীদা শরীফ লিখেছেন তিনি।
হে আশিকে রাসূল (দঃ) আপনার ক্বদমে মোরা জানায় অসংখ্য সালাম।
সর্বদা মনে পড়ে তোমায় হে মানযূর
দেখা দাও পাগলদেরকে……
সংগ্রহে- মোল্লা হাবিবুর রহমান
Leave a Reply