অর্থনীতি ডেস্কঃ ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। বর্তমানে খেলাপি ঋণের হার সাড়ে ১১ শতাংশ, এটিকে অতি উচ্চমাত্রার বলেছেন তিনি। এ হার ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে ব্যাংকারদের পরামর্শ দিয়েছেন গভর্নর।
জবাবে ব্যাংকাররা বলেছেন, ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের কারণেই খেলাপি ঋণের হার কমানো যাচ্ছে না। তাদের থেকে ঋণ আদায় বাড়ানোর জন্য আইনি সংস্কার দরকার। এ জন্য আইন কমিশনের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় এ আলোচনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সভাকক্ষে গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে এ সভায় অধিকাংশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও সভায় ঋণ আমানত অনুপাত নির্ধারিত সীমায় রাখা, ব্যাংকের মূলধন বাড়ানো, বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে সৃষ্ট চাপ কমাতে রেমিটেন্স ও রফতানি আয় বাড়ানোর উপায় নির্ধারণ, বৈদেশিক ঋণের প্রবাহ কমানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
সভা শেষে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে ১১ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ অনেক উচ্চমাত্রায় আছে। এটা কিভাবে কমানো যায় তা ভাবতে হবে। আদায় জোরদার এবং প্রকৃত সমস্যার কারণে কেউ খেলাপি হলে প্রয়োজনে পুনঃতফসিল করতে বলা হয়েছে।
মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ কমাতে চায়। এজন্য ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে শক্ত আইনি ব্যবস্থা দরকার। দৃষ্টান্তমূলক কিছু শাস্তি হলে সহজেই খেলাপি ঋণ আদায় বাড়ানো সম্ভব হবে। আইনি সহায়তার ক্ষেত্রে আইন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
প্রভিশন ঘাটতি নিয়ে এই ব্যাংকার বলেন, সামগ্রিকভাবে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি নেই। যেসব ব্যাংকের ঘাটতি রয়েছে অনেকে শিগগিরই তা মেটাতে পারবে। যাদের সমস্যা রয়েছে কিভাবে পূরণ করা যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা দেখবে। নগদ লেনদেন কমাতে কার্ডভিত্তিক লেনদেনের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংক গুরুত্বারোপ করেছে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে বৈদেশিক মুদ্রায় দেশের বাইরে থেকে নেয়া ঋণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিদেশ থেকে বর্তমানে ৬ শতাংশের কম সুদে ঋণ নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বর্তমানে লাইবর (লন্ডন আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজার) রেট বেড়েছে। যে কারণে এখন ৬ শতাংশের কম সুদে ঋণ পাওয়া কঠিন। বিদেশ থেকে ঋণ নিতে হলে এ সুদের হার বাড়াতে হবে।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, বৈদেশিক ঋণের সুদহার যেহেতু বাড়ছে, এখন বৈদেশিক মুদ্রার ঋণের পরিবর্তে স্থানীয় মুদ্রায় ঋণে জোর দিতে হবে। কিন্তু ব্যাংকাররা বলেছেন, স্থানীয় মুদ্রায় চাহিদা অনুযায়ী ঋণের জোগান দেয়া সম্ভব নয়। বাজারের চাহিদা মেটাতে হলে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ লাগবেই।
বৈঠকে ডলারের দর বেঁধে দেয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়। বলা হয়, বাজারে ডলারের চাহিদা বেশি। কিন্তু সরবরাহ কম। ফলে এর দাম বাড়ার প্রবণতা রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানির ক্ষেত্রে ডলারের দর বেঁধে দিলেও তা সীমার মধ্যে থাকছে না। এ কারণে বৈদেশিক মুদ্রার দরে সীমা আরোপের ক্ষেত্রে সরাসরি দর নির্ধারণ না করে শতাংশ বিবেচনায় সীমা আরোপ করার সুপারিশ করেছেন ব্যাংকাররা। এছাড়া সভায় বাণ্যিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণের বিপরীতে বন্ধকি জামানতি সম্পত্তির ডাটাবেজ করার যে উদ্যোগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সে বিষয়ে আরও সহায়তা করতে বলা হয়েছে ব্যাংকারদের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা এস কে সুর চৌধুরী বলেন, বৈঠকে ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে বলা হয়েছে। ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের ব্যাপারে আইনি সহায়তা নিতে আইন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। জুন পর্যন্ত ছিল ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এই তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা।