কোনো পেসার ছাড়াই মাঠে নামার যৌক্তিকতা প্রমাণ করছে বাংলাদেশ দল। প্রথম ইনিংসে ৫০৮ রানের শক্ত ভিত গড়ার পর শেষ সেশনে সাকিব-মিরাজের স্পিন ফাঁসে জড়িয়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ সেশনে ২৪ ওভার ব্যাটিং করতেই হাঁসফাঁস করতে হয়েছে তাঁদের। ৫ উইকেটে ৭৫ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছেন ছয় ও সাত নম্বর ব্যাটসম্যান! তাঁর আগে ক্যারিবীয় টপ অর্ডারের পাঁচজনকে বোল্ড করে ফিরিয়েছেন মিরাজ ও সাকিব।
বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস থেকে এখনো ৪৩৩ রানে পিছিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টেস্টে বাংলাদেশ কখনো কোনো দলকে ফলোঅনে পাঠায়নি। মিরপুর টেস্টে সেই সম্ভাবনা উজ্জ্বল করেছেন সাকিব ও মিরাজ। প্রতিপক্ষ দলকে স্পিন ফাঁস পরানোর উদ্বোধন করেছেন অধিনায়ক সাকিব নিজে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসের প্রথম ওভারেই দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে। অফ স্ট্যাম্পের একটু বাইরে ফেলে ক্রেগ ব্রাফেটের ব্যাট-প্যাড ফাঁকি দেন সাকিব।
নতুন বলে সাকিবের ওই ডেলিভারির পরই বোঝা যাচ্ছিল কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। প্রথম ৬ ওভারের মধ্যে তিনটি মেডেন, এর মধ্যে দুটি ওভার আবার উইকেট মেডেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান ডেনজা হেটমায়ার (৩২*) ও শেন ডওরিচ (১৭*)। তার আগে বিপজ্জনক হেটমায়ার একবার বেঁচে গেছেন নাঈম হাসানের বলে। এলবিডব্লিউয়ের আবেদন করেছিলেন নাঈম। আম্পায়ার সাড়া দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান হেটমায়ার।
তার আগে অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ রিভিউ নেওয়ার কোনো সুযোগ পায়নি। বোল্ড আউটের আবার রিভিউ কী! মিরাজের ঘূর্ণিতে কাইরন পাওয়েলও ফিরেছেন ব্যাট-প্যাডের মধ্যে ফাঁক রাখার খেসারত গুণে। ৬ ওভারের মধ্যে ৬ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ক্যারিবীয়রা তখন পথচ্যুত। এরপর দুই ওভারের ব্যবধানে (নবম ও দশম) ২টি উইকেট হারিয়ে বিপদটা আরও গভীর করেছেন সুনীল আমব্রিস ও রোস্টন চেজ। আমব্রিসের আউট দেখলে মনে হবে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বুঝি হাল ছেড়ে দিয়েছে! অযথাই উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন সাকিবকে। হয়তো ঘূর্ণি-চাপটা নিতে পারেননি। পরিণামে ফিরছেন বোল্ড হয়ে। পরের ওভারেই রোস্টন চেজকে ফিরিয়ে মাত্র ১০ ওভারের মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর ৪ উইকেটে ২০ রানে পরিণত করেন মিরাজ।
মিরাজ পরের উইকেটটি পেয়েছেন অনেকটাই উইকেটের সহায়তায়। হঠাৎ নিচু হয়ে আসা বলটা ব্যাটে খেলতে পারেননি শাই হোপ। উইকেটের এই আচরণ বলে দেয় কাল টেস্টের তৃতীয় দিনে আরও দুর্গতি অপেক্ষা করছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য। সাকিব-মিরাজ সেভাবে টার্ন না পেলেও নাঈম শুরু থেকেই পেয়েছেন। দিনের শেষ ওভারে ডওরিচকে একবার বেঁচে যান তাঁর বলে। ২৯ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে ডওরিচ-হেটমায়ারের অবিচ্ছিন্ন ৪৬ রানের জুটিতে।
তবে বাংলাদেশের স্পিন ফাঁসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আজ কতটা হাঁস-ফাঁস করছে তার প্রমাণ একটি পরিসংখ্যান। টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে কোনো দলই ২৯ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারায়নি। আগের নজির ওয়েস্ট ইন্ডিজেরই। সর্বশেষ টেস্টে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৪ রান তুলতে ৫ উইকেট হারিয়েছিল সফরকারী দল। আজ তো তা নতুন করে লেখালেন স্পিনাররা, কাল তৃতীয় দিনে কি তাহলে প্রতিপক্ষকে ফলোঅনে পাঠানোর পালা?
Leave a Reply