-
- বিনোদন
- শুভ জন্মদিন নায়ক রাজ রাজ্জাক
- Update Time : এপ্রিল, ১০, ২০২০, ১২:২৭ অপরাহ্ণ
- 148 View
মো. নাছির উদ্দীন : বিনোদ বিহারি চৌধুরী ভারতের হয়ে লড়েছেন স্বাধীনতা যুদ্ধে। আবার সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধেও। যে দেশেই থেকেছেন তার জন্য মন-প্রাণ উজাড় করে দিয়েছেন। এমনই বিপ্লবী ছিলেন বিনোদ বিহারি চৌধুরী। আজ এই রাজপথের অকুতোভয় দুঃসাহসী যোদ্ধার প্রয়াণ দিবস। ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল ১০২ বছর বয়সে চট্টগ্রামে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বিনোদ বিহারি চৌধুরী।
ভারতের স্বাধীনতা ইতিহাস খুঁজলে বহু বিপ্লবী এবং শহীদের নাম পাওয়া যাবে। কিন্তু বিনোদ বিহারি চৌধুরীর মতো ব্যক্তিত্ব খুবই কম পাওয়া যাবে। বিরল বললেও ভুল হবে না। বিপ্লব, আন্দোলন, লড়াই ছিল তাঁর শিরা-উপশিরায়। যতদিন ভারত স্বাধীন হয়নি ততদিন দেশ মাতৃকার জন্য লড়ে গেছেন। স্বাধীনতার পর দেশ ভাগ হলে চট্টগ্রামে থেকে গেলেন। পাকিস্তান থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য লড়াই শুরু করলো বাংলার বিদ্রোহীরা। রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণ অবসর নেওয়া বিনোদ বিহারি চৌধুরী আবারও ফিরলেন স্বমহিমায়। ভূমিকা আবারও বিপ্লবীর। উদ্দেশ্য আবারও বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন।
১৯৩০ সালের ১৮ই এপ্রিল, তখন ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধে লড়ছেন তরুণ বিনোদ বিহারি চৌধুরী। ভারতের স্বাধীনতা ইতিহাসের বিখ্যাত চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন কারোর অজানা নয়। এই বৈপ্লবিক কার্যক্রমে মাষ্টার দা সূর্যসেনের সঙ্গী ছিলেন তিনি। সূর্যসেনের তৈরি চার অ্যাকশন গ্রুপের মধ্যে বিনোদ বিহারী চৌধুরী ছিলেন পুলিশ অস্ত্রাগার দখলের দলে। ‘অস্ত্রাগার দখল দল’ শাবল দিয়ে আলমারি ভেঙে অস্ত্র সংগ্রহ করেন এবং অবশিষ্ট অস্ত্র ধ্বংস করে দেন।
এরপরের ঘটনা ২২ এপ্রিলের। জালালাবাদের পাহাড়ে মাস্টার দা’র দলের উপর হামলা চালায় ব্রিটিশ। যুদ্ধে শহীদ হন মোট ১১জন বিপ্লবী। ব্রিটিশদের ছোঁরা গুলি বিদ্ধ করে বিনোদ বিহারি চৌধুরীর গলা। এফোঁড় ওফোঁড় করে বেড়িয়ে যায় গুলি। কিছুক্ষণের জন্য জ্ঞান হারিয়েছিলেন বিপ্লবী। তবে বিপ্লবের রক্ত যার শিরা-উপশিরায় তার প্রাণ নেওয়া অত সহজ নয়। মৃত্যুকে হারিয়ে ফিরে এসেছিলেন রণক্ষেত্রে। ১৯৩৩ সালে তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি সূর্যসেনের ফাঁসিতে হতাশ হলেও দমে যাননি বিনোদ বিহারি চৌধুরী। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে এবার সংসার করার চেষ্টা করেন। মেধাবী ছাত্র ম্যাট্রিক থেকে শুরু করে ডিস্টিংশনসহ বিএ এবং আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন। আইনকে পেশা হিসাবে নিলেন। বিয়ে করলেন বিভা দাসকে। ১৯৪১ সালে তিনি আবারও গ্রেফতার হন। বন্দি থাকাকালীন নির্বাচিত হন বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের নির্বাহী পরিষদের সদস্য হিসেবে। ১৯৪৫ সালে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান। এই পর্যন্ত ছিল তাঁর ভারত পর্ব।
এরপরের অংশ বাংলাদেশের হয়ে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খান দেশের সব রাজনৈতিক দলকে বেআইনি ঘোষণা করলে সক্রিয় রাজনীতি থেকে বিনোদ বিহারী চৌধুরী অবসরে যান।১৯৬৯ সালে স্বৈরশাসনবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে তিনি অংশ নেন। ১৯৭১ সালে বিনোদ বিহারি চৌধুরী ভারতে আশ্রয় নেন এবং কলকাতায় মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি চট্টগ্রামে ফিরে আসেন। এই সময় তিনি পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন শিক্ষকতাকে। ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল বাংলাদেশে ১০২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বিনোদ বিহারি চৌধুরী। তাঁর জন্মের সঙ্গেও জড়িয়ে ছিল ১০ সংখ্যাটি। ১৯১১ সালের ১০ জানুয়ারির এমন দিনেই জন্ম হয়েছিল তার।
Leave a Reply