মো. নাছির উদ্দীন : তামিম ইকবালের ইনিংসটির মধ্যে দিয়ে ফুরিয়েছে দেশের ক্রিকেটের দীর্ঘ এক প্রতীক্ষা। ২০০৭ সালের মার্চে জাতীয় লিগে ৩১৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন রকিবুল হাসান। তারপর থেকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ট্রিপল সেঞ্চুরির সীমানায় পা রাখতে পারছিলেন না কোনো বাংলাদেশী। অবশেষে পারলেন তামিম ইকবাল। এবারের বিসিএলে মধ্যাঞ্চলের বিপক্ষে পূর্বাঞ্চলের হয়ে করলেন অপরাজিত ৩৩৪। এই রান করার মধ্যে দিয়ে পিছনে ফেললেম রকিবুল হাসানের করা ৩১৩ রানকে। এখন থেকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের এক ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোরারের নাম তামিম ইকবাল।
ট্রিপল সেঞ্চুরি যখন ছুঁলেন, তামিম ইকবালের শরীরী ভাষায় বোঝা যায়নি তার উচ্ছ্বাসের মাত্রা। তবে দিনশেষে জানালেন, ইনিংসটির মাহাত্ম্য তার কাছে বিশেষ কিছু।
“এটা স্পেশাল অনুভূতি। সত্যি কথা, আমি কখনও চিন্তা করিনি যে ট্রিপল সেঞ্চুরি করব। স্বপ্ন অবশ্যই থাকে সবার। তবে এই ম্যাচেই হয়ে যাবে, সেটি ভাবতে পারিনি।”
“তিনশ রান করা যে কোনো প্রতিপক্ষ বা যে কোনো পর্যায়ের ক্রিকেটে কঠিন কাজ। সহজ হলে তো প্রতি মাসে একজন করে তিনশ করত। এটি অবশ্যই স্পেশাল। আমার হৃদয়ে বিশেষ জায়গা নিয়েই থাকবে।”
২২২ রান নিয়ে গত রবিবার ম্যাচের তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করেছিলেন তামিম। তিনশ’র ভাবনা মনে উঁকি দেওয়ার কথা তখনই। লাঞ্চের আগে করে ফেলেন ২৭৯। তবে তিনি জানালেন, ট্রিপল সেঞ্চুরির কথা ভেবেছেন আরও পরে।
“২৬০-২৭০ হওয়ার পরও ভাবিনি। ২৮০ স্পর্শ করার পর এটা মাথায় এসেছে। আগে মনে হয়েছে, এটি নিয়ে যদি বেশি চিন্তা করি, তাহলে আমি যে পরিকল্পনা নিয়ে খেলেছি, তা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। অন্য কিছু করার চেষ্টা করিনি।”
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের ২০ বছরের পথচলায় ট্রিপল সেঞ্চুরিয়ান পাওয়া গেল কেবল দুইজন। প্রথম জনের এক যুগেরও বেশি সময় পর মিলল আরেকজন। কেন এই স্বল্পতা, এই দীর্ঘ খরা? তামিমের কথায় উঠে এলো দেশের ক্রিকেটের বাস্তবতা।
“তিনশ করা আমাদের দেশের উইকেটে সহজ নয়। কারণ উইকেট ধীরগতির থাকে, স্পিন করে। অনেক ধৈর্য্যের ব্যাপার। একটু গতিময় উইকেট ও গতিময় আউটফিল্ডে ব্যাট করা তুলনামূলক একটু সহজ হয়। আমাদের বাস্তবতায় একটু কঠিন।”
“আমি সবসময় চিন্তা করতাম, রকিবুল কিভাবে করেছিল। আমাদের দলেও এটি অনেক বড় আলোচনার একটি ব্যাপার ছিল যে ওই একজনই পেরেছে, এত ধৈর্য্য কিভাবে রাখতে পেরেছিল!”
যাকে ছাড়িয়ে রেকর্ড গড়লেন তামিম, সেই রকিবুল ছিলেন মাঠেই। প্রতিপক্ষে দলে থেকে দেখেছেন নিজের রেকর্ড হাতছাড়া হওয়ার মূহুর্ত। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে একসঙ্গে খেলছেন দুজন। ইনিংসটির সময়ও মাঠে চলেছে দুজনের খুনসুটি। রকিবুল স্লেজিং করেননি তামিমকে?
তামিম খুনসুটি করলেন দিনের খেলা শেষে এই প্রশ্নের উত্তরে, “স্লেজিং তো করেছেই, তবে দোয়াও নিশ্চয়ই করেছে!” রকিবুল ছিলেন পাশেই। তামিমের কথা কেড়ে নিয়ে বললেন, “আমি স্লেজিং করব কী, তামিম ব্যাটিংয়ে থেকেই আমাকে বেশি স্লেজিং করেছে!”
এরকম খুনসুটি ছিল, মজা ছিল। আর ছিল তৃপ্তি। নিজের ইনিংস তামিমকে সন্তুষ্টি দিয়েছে দারুণভাবে। তবে সেটি রেকর্ড গড়ার কারণে যতটা, তার চেয়ে বেশি নিজের খেলার ধরনে।
“আমি খুবই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম। উইকেট খুব ভালো ছিল (ব্যাটিংয়ের জন্য), স্পিন খুব বেশি করেনি, বেশি কিছু করছিল না। আমিও ব্যাটিংটাকে সিম্পল রেখেছি। তিনশ রান করার পরই কেবল ঝুঁকি নিয়েছি। তার আগে মনে হয়নি যে আলাদা কিছু করতে হবে। স্রেফ ব্যাটিং করে গেছি, ক্রিকেটিং শট খেলে গেছি। আর বাউন্ডারির সুযোগ খুঁজেছি, ছক্কার নয়।”
“আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল যেভাবে ব্যাট করেছি। কত রান করেছি বা তিনশ করেছি, এসবের চেয়েও, সবচেয়ে বেশি তৃপ্তির ছিল আমি যেভাবে খেলেছি। আমি খুশি, আশা করি এই ফর্ম ধরে রাখতে পারব।”
এই ম্যাচের পর দিনই টেস্ট খেলতে পাকিস্তানে যাবে বাংলাদেশ দল। তামিমের ফর্ম ধরে রাখা সেখানেই বেশি জরুরি!
Leave a Reply