মো. নাছির উদ্দীন : দেশে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা কমছে বলে আজ আবারও আশ্বস্ত করলো চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে গতকাল গোটা দেশ জুড়ে ২ হাজার ৯ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। মারা গেছে ১৪২ জন। সব মিলিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা এখন ১ হাজার সাত’শর ওপরে। আর আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৬৮ হাজার। সুস্থ হয়ে এখন পর্যন্ত হাসপাতাল ছেড়েছেন ৯ হাজারেরও অধিক মানুষ। চিনের বাইরে অন্তত ৩০টি দেশে পাঁচ’শ জন এই ভাইরাসে সংক্রামিত হয়েছেন বলে জানা গেছে। চীনের বাইরে ফ্রান্স, হংকং, ফিলিপিন্স ও জাপানে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে চীনে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৭০০ জনের বেশি চিকিৎসাকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। আজ জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের মুখপাত্র মি ফেং জানিয়েছেন, সরকারের সর্বাত্মক প্রস্তুতির কারণে সংক্রমণ থেকে উত্তরণের প্রচেষ্টা অনেকাংশে সফল হচ্ছে। করোনাভাইরাস রুখতে পারে এমন বেশ কিছু ওষুধ পরীক্ষামূলক ভাবে ব্যবহার করে দেখা গেছে সেগুলি যথেষ্ট কার্যকরী।
আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বেজিংয়ে বৈঠকে বসেন চিনের স্বাস্থ্য অধিকর্তারা। এই মহামারী রোখার প্রক্রিয়া কতটা কার্যকর হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে দেশের তিনটি অঞ্চলে যৌথভাবে অভিযান চালাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও চীনের স্বাস্থ্য কমিশন।
এরই মধ্যে চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের একটি বক্তৃতা ঘিরে শুরু হয়েছে আলোচনা। যেখানে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে,দেশের মানুষকে সচেতন করার অনেক আগেই করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবগত ছিলেন প্রেসিডেন্ট। করোনাভাইরাস নিয়ে শুরুতেই মুখ না খোলায় সমালোচনার মুখে পড়তে হয় জিন পিংকে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি চীনা প্রেসিডেন্ট যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন,গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তা প্রকাশিত হয়েছে কমিউনিস্ট পার্টির জার্নালে। যেখানে তিনি বলেছেন, ৭ জানুয়ারিই তিনি করোনাভাইরাস ‘প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের’ নির্দেশ দেন। অথচ এই ভাইরাস নিয়ে দেশের মানুষকে সচেতন করা হয় জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে। সমালোচকদের বক্তব্য, জিন পিংয়ের বক্তৃতার এই অংশ প্রকাশ করে সরকার প্রমাণ করতে চাইছে শুরু থেকেই করোনাভাইরাস রুখতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি তারা। এমনিতেই করোনাভাইরাস নিয়ে অনেকদিন পর্যন্ত মুখ না খোলায় প্রেসিডেন্টের আচরণ নিয়ে জনরোষ বেড়েছিল। তা চরম আকারে পৌঁছায় এই মাসের গোড়ায় দিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে লি ওয়েনলিয়াংয়ের মৃত্যুর পর। তাতে প্রলেপ দিতেই এই দাবি, মনে করছেন সমালোচকরা।
গতকাল হুবেই প্রদেশের ৬টি শহর থেকে বিশেষ বিমানে তাদের মোট ১৭৫ জন নাগরিককে নিজ দেশে নিয়ে গেছে নেপাল। তাঁদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী। সে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীন ফেরত নাগরিকদের আগামী দু’সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। জানুয়ারির শুরু থেকেই ‘তালাবন্দি’ হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান। আজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং উই জানিয়েছেন, হুবেইয়ে নতুন করে সংক্রমণের ঘটনা যেমন কমছে, তেমন সংক্রমণ মুক্ত হচ্ছেন বহু মানুষ। এই আতঙ্কের মধ্যেই শুরু হয়েছে টোকিও অলিম্পিকের প্রস্তুতি। মশাল হাতে দৌঁড়ের মহড়া ছিল গতকাল।
Leave a Reply