স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পর পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে আটক রাখা হয়। স্বাধীনতাকামী এই নেতাকে কারাগারে হত্যার ভয় দেখানো হয়। কিন্তু তিনি কিছুতেই দমে যাননি। আপসহীন এ নেতা অটল ছিলেন বাংলাদেশকে স্বাধীন করার প্রতিজ্ঞায়। ১৯৭২ সালের ৭ই জানুয়ারি ভোর রাতে বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্ত করে বিমানে পাঠিয়ে দেয়া হলো লন্ডনে। তখন তার সঙ্গে ড. কামাল হোসেনও ছিলেন। সকাল সাড়ে ৬টায় তারা পৌঁছান লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে। বেলা ১০টার পর তিনি কথা বলেন, বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দীন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে। বৃটেনের বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে করে পরের দিন ৯ই জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন বঙ্গবন্ধু। ১০ই জানুয়ারি দিল্লিতে অবতরণ করে ওই বিমান। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, পুরো মন্ত্রিসভা, রাজনৈতিক দলের নেতারা রাজকীয় অভ্যর্থনা জানান বঙ্গবন্ধুকে। বঙ্গবন্ধু ঢাকা এসে পৌঁছেন ১০ই জানুয়ারি দুপুরের পর। ১৬ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের পর বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানাতে অধীর অপেক্ষায় ছিল। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পর্যন্ত তাকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানায়। লাখো মানুষের ভিড় ঠেলে বঙ্গবন্ধুকে বহন করা গাড়ি বহর উদ্যানে পৌঁছতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। বিকাল পাঁচটায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ধ্রুপদি ভাষণে বলেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালোবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালোবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালোবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারবো কিনা। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। বঙ্গবন্ধু তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যা দিয়েছিলেন অন্ধকার থেকে আলোপথে যাত্রা হিসেবে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি: বঙ্গবন্ধু’র স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল সাড়ে ৬টায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারা দেশে সংগঠনের সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৯টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন। বিকাল সাড়ে ৩টায় ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সীমিত পরিসরে আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখবেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ ছাড়াও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং সংগঠনের সকল সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কেন্দ্রীয় কমিটির অনুরূপ কর্মসূচির আয়োজন করবে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের সকল কর্মসূচি স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালনের জন্য দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ সংগঠনের সকল সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
Leave a Reply